উচ্চ রক্তচাপ বা Hypertension কমানোর সহজ উপায়-উচ্চ রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপ একটি পরিচিত রোগ। সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কিন্তু তা জানেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপের প্রায় অর্ধেক রোগীই জানেন না যে তারা এই রোগে ভুগছেন।উচ্চ রক্তচাপ বা Hypertension কমানোর সহজ উপায়
উচ্চ রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। এছাড়াও, স্বাস্থ্যকর লোকেরা জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন করে সহজেই তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের বিশেষ কোনো লক্ষণ থাকে না। নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা খুঁজে বের করার একটি উপায়। রক্তচাপ পরিমাপ করার সময়, একটি রক্ত মাপার যন্ত্র দ্বারা দুটি সংখ্যা রেকর্ড করা হয়:
সিস্টোলিক চাপ:
দুটি রিডিংয়ের মধ্যে বড় সংখ্যা বা উচ্চতর মান হল সিস্টোলিক চাপ। হৃদপিন্ডের প্রতিটি স্পন্দনের সাথে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের সময় এই চাপ তৈরি হয়।
ডায়াস্টোলিক চাপ:
দুটি রিডিংয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সংখ্যা বা নিম্ন মান হল ডায়াস্টোলিক চাপ। রক্ত সঞ্চালনের বিরুদ্ধে রক্তনালীর বাধার কারণে এই চাপ সৃষ্টি হয়।
রক্তচাপ মিলিমিটার (পারদ) বা mmHg এ পরিমাপ করা হয়। ধরুন আপনার রক্তচাপ হল 120/60 মিলিমিটার (পারদ)। তাহলে সিস্টোলিক চাপ হবে 120 এবং ডায়াস্টোলিক চাপ 60 হবে।
মানুষের রক্তচাপ একে অপরের থেকে কিছুটা আলাদা। একজন ব্যক্তির জন্য উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ অন্য ব্যক্তির জন্য স্বাভাবিক হতে পারে। রক্তচাপ যদি 90/80 থেকে 120/80% এর মধ্যে থাকে তাহলে সেটাকে স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়।
সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বলা হয় যদি-
- রক্তচাপ সর্বদা ১৪০/৯০ বা তার বেশি
- ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের রক্তচাপ ১৫০/৯০ বা তার বেশি হলে
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
উচ্চ রক্তচাপের সঠিক কারণ সবসময় চিহ্নিত করা যায় না। তবে বিভিন্ন কারণে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেঃ
- মাত্রাতিরিক্ত ওজনের হচ্ছে
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
- খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল না থাকা
- অতিরিক্ত মদ্যপান
- অতিরিক্ত চা-কফি, কোমল পানীয় এবং অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
- পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা
- ধূমপান করা
- রাতে একটানা ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম
- বয়স পঁয়ষট্টি বছরের বেশি হতে হবে
- পরিবারে বাবা, মা, ভাইবোনের মতো নিকটাত্মীয়দের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
রক্তচাপ ১২০/৮০ থেকে ১৪০/৯০ এর মধ্যে থাকলে ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ঝুঁকি থেকে যায়, এমনকি দিন দিন বাড়তে থাকে।
রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে গেলে রোগীর রক্তনালী, হার্ট, মস্তিষ্ক, কিডনি ও চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ক্রমাগত অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ কিছু প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন
- হৃদরোগ
- হৃদপিন্ডে হঠাৎ আক্রমণ
- স্ট্রোক
- হার্ট ফেইলিউর
- কিডনির সমস্যা
- পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া (Peripheral Artery Disease)। ফলাফল গ্যাংগ্রিন বা পট্রিফেকশন হতে পারে।
- Aortic Aneurysms (অ্যাওর্টা নামক দেহের বৃহত্তম ধমনীর রোগ)
- মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ হ্রাসের কারণে সৃষ্ট ডিমেনশিয়া (Vascular Dementia)
প্রেসার পরিমাপের নিয়ম
চল্লিশোর্ধ সুস্থ ব্যক্তিদের সাধারণত প্রতি ৫ বছরে অন্তত একবার তাদের রক্তচাপ পরিমাপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বেশি তাদের বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ মাপা উচিত। রক্তচাপ নিরীক্ষণের মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।উচ্চ রক্তচাপ বা Hypertension কমানোর সহজ উপায়
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় ঝুঁকি থেকে যায়, এমনকি দিন দিন বাড়ছে।
ডাক্তাররা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দুটি উপায়ের পরামর্শ দেন। প্রথম ধাপ হল স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তন করা। এভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। তবে রোগ নির্ণয়ের সময় চাপ খুব বেশি হলে শুরুতেই লাইফস্টাইল পরিবর্তনের পাশাপাশি ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তন করা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে পারে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
বিভিন্ন রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। কোন পদ্ধতি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো তা জানতে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।উচ্চ রক্তচাপ বা Hypertension কমানোর সহজ উপায়
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন
কিছু স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তন উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিছু পরিবর্তন হয়েছে:
- খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা
- অ্যালকোহল সেবন কমিয়ে দিন
- অতিরিক্ত ওজন কমানো
- ব্যায়াম নিয়মিত
- অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন
- ধুমপান ত্যাগ কর
উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ
উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে চিকিৎসক রোগীকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এক বা একাধিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা রোগীর রক্তচাপ, বয়স, রঙ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বিবেচনা করে।
ওষুধগুলি সাধারণত ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এবং দিনে একবার নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে প্রয়োজনে দিনে দুবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
অনেক রোগীকে তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ওষুধের সংমিশ্রণ নিতে হতে পারে।
এমনটা কখনই করবেন না
অনেকে শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন বা নিজেরাই ডোজ কমিয়ে দেন। এই কাজটি সম্পূর্ণ অনুচিত। এটি উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব এবং অন্যান্য জটিল এবং জীবন-হুমকির স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তাই ওষুধের সঠিক ডোজ নিয়মিত খেতে হবে। ওষুধের পাশাপাশি ভারসাম্যপূর্ণ এবং পরিমিত জীবনযাপন, ব্যায়ামের অভ্যাস, ধূমপান ত্যাগ – এই স্বাস্থ্যকর পরিবর্তনগুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ করে তুলবে।
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিছু ওষুধ হলঃ-
- এসিই ইনহিবিটার। যেমন: এনালাপ্রিল, লিসিনোপ্রিল এবং রাদামিপ্রিল
- অ্যাঞ্জিওটেনসিন 2 রিসেপ্টর ব্লকার। যেমন: ক্যান্ডেসার্টান, ইরবেসার্টান, ভালসার্টান এবং ওলমিসার্টান
- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার। যেমন: অ্যামলোডিপাইন, নিফেডিপাইন, ডিলটিয়াজেম এবং ভেরাপামিল
- মূত্রবর্ধক। যেমন: ইন্ডাপামাইড এবং বেন্ড্রফ্লুমেথাজাইড
- বিটা ব্লকার. যেমন: ইথানলল, মেটোপ্রোলল, ল্যাবেটোলল, কার্ভেডিলল এবং বিসোপ্রোলল
- আলফা ব্লকার। যেমন: ডক্সাজোসিন
- অন্যান্য মূত্রবর্ধক। যেমন: স্পিরোনোল্যাকটোন এবং অ্যামিলোরাইড
<<<<<আরো জানতে ক্লিক করুন>>>>>
সম্পূর্ণ নিবন্ধটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আশা রাখি এই নিবন্ধটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন রকম টিপস পেতে আমাদের পেজের সাথেই থাকুন।